কম্পিউটারের জনকঃ
ইংল্যান্ডের গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়। চার্লস ব্যাবেজ  ১৮৩৩ সালেএ্যানালিটিক্যাল  ইঞ্জিননামে একটি মেকানিক্যাল কম্পিউটারের পরিকল্পনা করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি  এই যন্ত্র নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যান। তাঁর এই মেশিনে আধুনিক কম্পিউটারের ন্যায়  নিয়ন্ত্রণ অংশ, গাণিতিক অংশ, স্মৃতি অংশ, ইনপুট যন্ত্র এবং আউটপুট যন্ত্রের ব্যবস্থা করে রাখেন। ব্যাবেজের এই মেশিনের পরিকল্পনা আজও আধুনিক কম্পিউটারের মূলনীতি হিসাবে স্বীকৃত। এই জন্য চার্লস ব্যাবেজকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়। 



আবিষ্কারকঃ
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওয়ার্ড আইকেন কে কম্পিউটারের আবিষ্কারক বলা হয়

অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) বা পরিচালনা পদ্ধতিঃ


অপারেটিং সিস্টেম বলতে এমন একটি পরিচালনা পদ্ধতিকে বুঝায় যার মাধ্যমে কোনো ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন অনুসারে নির্দেশ প্রদান করে কম্পিউটারের অভ্যন্তরে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার বা ব্যবহারিক প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে কাজের সমন্বয় সাধন করে সমগ্র কর্ম প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে। অন্য কথায় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য যে সমস্ত প্রোগ্রাম কাজ করে তাহাকে অপারেটিং সিস্টেম বলা হয়। এজন্য অপারেটিং সিস্টেমকে সিস্টেম সফটওয়্যার হিসেবেও অবহিত করা হয়। অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যর হচ্ছে অনেক রকম সূক্ষ্ম ও জটিল প্রোগ্রামের সমন্বয়ে গঠিত একটি সমন্বিত প্রোগ্রাম। 

অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্বঃ 

কম্পিউটার পরিচালনার ক্ষেত্রে অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্ব অপরিসীম। অপরেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের যাবতীয় কর্ম পরিচালনাকে নিয়ন্ত্রণ এবং কম সময়ে বেশি তথ্যাদি প্রক্রিয়ার সাথে সাথে কম্পিউটারের দক্ষতা বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়াও কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার কার্যক্রমকে সূচারুরূপে পরিচালনার ব্যবস্থা করা, হার্ডওয়্যারের ত্রুটি নির্ণয়, ডিস্ক ডাইরেক্টরী নিয়ন্ত্রণ, নতুন ডিস্ক ফরমেট, করে সংরক্ষণ উপযোগী করণ, ডিস্কে লিখন ও ডিস্ক হতে পঠন, ডিস্কের তথ্য মুছে দেয়া ও এক ডিস্ক হতে অন্য ডিস্কে অনুলিপি করা, প্রধান স্মৃতিতে প্রোগ্রাম উত্তোলন ও চালনার ব্যবস্থা করা, অপারেটরের নির্দেশ গ্রহণ, বিশ্লেষণ ও তদনুসারে কর্ম সম্পাদন, ব্যাচ প্রসেসিং এর সুবিধা এবং প্রোগ্রামের ত্রুটি নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান প্রভৃতি অপারেটিং সিস্টেমের কাজ। 

অপারেটিং সিস্টেমের কাজঃ 

অপারেটিং সিস্টেম হলো এমন একটি পরিচালনা পদ্ধতি যার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন অনুসারে নির্দেশ প্রদান করে কম্পিউটারের অভ্যন্তরে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার বা ব্যবহারিক প্রোগ্রাম সমূহের মধ্যে কাজের সমন্বয় সাধন করে সমগ্র প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। নিচে অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন কাজ উল্লেখ করা হলো। 

১। কম্পিউটারকে সচল ও ব্যবহার উপযোগী করা। 
২। ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যবহারিক প্রোগ্রাম মেমোরিতে নিয়ে আসা এবং  কাজ করা। 
৩। ব্যবহারকারীর সাথে বিভিন্ন সফটওয়্যারের সংযোগ, সমন্বয় সাধন, পরিচালনা ও নির্দেশ গ্রহণে সহায়তা প্রদান করে। 
৪। ব্যবহারকারী কর্তৃক দেয়া নির্দেশ গ্রহণ, বিশ্লেষণ ও কার্যকরী করা। 
৫। ডিস্কে উপাত্ত বা তথ্য লিখন ও ডিস্ক থেকে উপাত্ত ও তথ্য পাঠ করা। 
৬। ডিস্ক ফরমেট করে কাজের উপযোগী করা। 
৭। বিভিন্ন ডিস্ক কমান্ড কার্যকর করা। 
৮। ডিস্কের ত্রুটি নির্ণয় ও সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সংশোধনের কাজ করা। 
৯। ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করা। 
১০। হার্ডওয়্যার সমূহের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, সমন্বয় সাধন ও পর্দায় বার্তা প্রদান করা। 

এছাড়া অপারেটিং সিস্টেম আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।


অপারেটিং সিস্টেমের সংগঠন (Organization of Operating System)
অপারেটিং সিস্টেম প্রথমতঃ ২ (দুই) ভাগে ভাগ করা যায়।

১) নিয়ন্ত্রক প্রোগ্রাম (Control Program)
২) পরিচর্যা প্রোগ্রাম (Service Program)

১) নিয়ন্ত্রক প্রোগ্রামঃ 

Input/Output Device দিয়ে তথ্য আদান প্রদান, কম্পিউটার অপারেটর বা ব্যবহারকারীর মধ্যে সংযোগ রক্ষন, Interrupt ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ, প্রোগ্রাম পরিচালনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক কার্যবিবরণী রক্ষা করণ, প্রোগ্রাম পরিচালনা ব্যয় নির্ণয় করণ, বৃহৎ প্রোগ্রামকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে পরিচালনা, ত্রুটি নিবারণ করে কার্য পরিচালনা এবং  এক সাথে অনেক প্রোগ্রাম চালনা নিয়ন্ত্রক প্রোগ্রামের কাজ। 
এই প্রোগ্রামের কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য কিছু সহ প্রোগ্রাম বা রুটিন প্রোগ্রাম রয়েছে, যেগুলো ৩ (তিন) ভাগে বিভক্ত। যথা-
ক) তদারকি প্রোগ্রাম (Supervice Program) 
খ) নির্দিষ্ট কার্য নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম (Job Control Program) 
গ) গ্রহণ/নির্গম নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম (Input/Output Control Program) 

ক) তদারকি প্রোগ্রাম (Supervice Program)

এই প্রোগ্রাম নির্বাহী পদ্ধতির প্রোগ্রামগুলির বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে নির্বাহী একটি অংশকে সুপারভাইজার/মনিটর/নির্বাহক বলা হয়। নির্বাহী পদ্ধতির প্রোগ্রামগুলিকে সাধারণতঃ সহায়ক স্মৃতিতে রাখা হয়, যা System Resident Memory নামে পরিচিত। কম্পিউটারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার সাথে সাথে এই মেমোরীতে সুপারভাইজার প্রোগ্রামের একটি অংশ ‍প্রধান স্মৃতিতে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। 

খ) নির্দিষ্ট কার্য নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম (Job Control Program) 

কোনো কাজ করার সময় একটি একটি করে কাজ সম্পন্ন করে থাকে। এভাবে একটি কাজ শেষ করে আরেকটি কাজ শুরু করার মাঝে কোনো সময়ের অপচয় যেনো না হয় সেজন্য আধুনিক কম্পিউটার পদ্ধতিতে অনেকগুলো কাজ সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়। জব কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এই সারিবদ্ধ অপেক্ষমান কাজগুলো পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করার দায়িত্ব পালন করে। Job Control Language (J.C.L) ব্যবহার করে সারিবদ্ধ বা অপেক্ষমান কাজগুলো পর্যায়ক্রমে প্রক্রিয়াকরনের জন্য অপারেটিং সিস্টেমের নির্দেশগুলো লেখা হয়। এ ভাষায় লিখিত স্টেটমেন্ট বা বিবরণগুলো অপারেটিং সিস্টেমকে কাজের নাম, প্রক্রিয়াকরনের সময় যে সকল ইনপুট-আউটপুট যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয় সেগুলোর নাম, ভাষা অনুবাদের প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের নাম বলে দেয়। 

গ) গ্রহণ/নির্গম নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম (Input/Output Control Program)

এই প্রোগ্রাম কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে অপারেটিং সিস্টেম (Input/Output Device এর অংশগুলির খবর রাখে। এ সময় কোনো অসুবিধা দেখা দেয়ার সাথে সাথে কনসোল টাইপ রাইটারে লিখে কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেয়। 



২। পরিচর্যা প্রোগ্রামঃ

পরিচর্যা প্রোগ্রামকে ২ (দুই) ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
ক) প্রক্রিয়াকরণ প্রোগ্রাম (Processing Program) 
খ) ইউটিলিটি প্রোগ্রাম (Utility Program) 


ক) প্রক্রিয়াকরণ প্রোগ্রামঃ
প্রক্রিয়াকরণ প্রোগ্রামের কাজ হলো, প্রোগ্রামকে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তর করা, প্রোগ্রামের ভুল সংশোধন করা ইত্যাদি। 


খ) ইউটিলিটি প্রোগ্রামঃ
ফাইল পরিচালনা, কম্পিউটার পদ্ধতির লাইব্রেরী প্রোগ্রাম সংরক্ষণ, শর্ট ও মার্জ প্রক্রিয়া পরিচালনা প্রভৃতি কাজ সম্পাদনের জন্য যে প্রোগ্রাম ব্যবহৃত হয় তাহাকে ইউটিলিটি প্রোগ্রাম বলে।


অপারেটিং সিস্টেমের প্রকারভেদ (Classification of Operating System) 

১) ব্যাচ মোড অপারেটিং সিস্টেম (Batch Mode Operating System)
২) রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Real Time Operating System)
৩) মাল্টি প্রোগ্রামিং অপারেটিং সিস্টেম (Multi Programming Operating System)
৪) টাইম শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম (Time Sharing Operating System)
৫) ভার্চুয়াল স্টোরেজ অপারেটিং সিস্টেম (Virtual Storage Operating System)
৬) মাল্টি প্রসেসিং অপারেটিং সিস্টেম (Multi Processing Operating System)
৭) ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম (Distributed Operating System)



চিত্র ভিত্তিক এবং বর্ণ ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমঃ
মাইক্রো কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার দুটি পদ্ধতি রয়েছে। 
১) বর্ণ ভিত্তিক (Text Based) 
২) চিত্র ভিত্তিক (Graphical User Interface) 

১) বর্ণ ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমঃ 
এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে কী বোর্ডের সাহায্যে বিভিন্ন বর্ণ টাইপ করে এবং কী বোর্ডের বিভিন্ন বোতাম ব্যবহার করে কম্পিউটারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতে হয়। 

২) চিত্র ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমঃ 
এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে এসব কাজ করতে হয় বিভিন্ন প্রকার আইকোন এবং পুল-ডাউন মেনু কমান্ড ব্যবহার করে। আইকোন হলো বিভিন্ন ব্যবহারিক প্রোগ্রাম, ফাইল, ফোল্ডার এবং অন্যান্য সফটওয়্যারের প্রতিকী চিত্র। মাউসের সাহায্যে এসব আইকোন এবং পুল-ডাউন মেনু কমান্ড নির্বাচন করে কার্যকর করা যায়। 



ডস (DOS) মাইক্রো কম্পিউটারের বহুল ব্যবহৃত একটি বর্ণ ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। 
এছাড়া চিত্র ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলো হচ্ছে- Windows 3.11, Windows -95, Windows -98, Windows -2000, Windows XP, Windows -NT, Windows -7, Windows -8.1, Windows -10, UNIX, Linux, MAC OS, OS/2, Solaries, XENIX,